ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে সেরা ৫ টি পরামর্শ

বর্তমান যুগে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সঙ্গে আমরা ভীষণভাবে পরিচিত। সহজ ভাষায় ফ্রিল্যান্সিং হলো কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে দেওয়া কিছু অর্থের বিনিময়ে। 

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য বা ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করার জন্য প্রথমেই কোনো একটি বিষয় দক্ষতা বা skill গড়ে তুলতে হবে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন বিষয়ের ওপর স্কিল গড়ে তুলবো বা Developed করবো। 

এই পোস্টি টিতে আজ আমি আলোচনা করবো ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে যে ৫ টি বিষয় অবশই মনে রাখতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিং টিপস – নিজেকে চিনুন (Know Yourself):

কোনো বিষয় ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগেই নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন যে আমি কি ওই বিষয়টি শেখার জন্য উপযুক্ত কিনা। 

সেটা আপনি কি করে বুঝতে পারবেন ?

ধরুন আপনি ছবি আঁকতে ভালো বসেন। এবার কারুর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা শুরু করলেন। কদিন পরে আপনি অনুভব করলেন যে ডিজিটাল মার্কেটিং আপনার ভালো লাগছে না। 

তখন আপনি কি করবেন ?

ইতিমধ্যে অনেকটা সময় ও অর্থ আপনি ওই বিষয় শেখার জন্য ব্যয় করে ফেলেছেন। 

আমার মতে আপনি অবশই ওই বিষয় থেকে বেরিয়ে এসে নিজের যেটা ভালো লাগে সেটা নিয়ে শিখতে শুরু করুন। 

এখন আপনি হয়তো বলবেন আমার তো অনেক বিষয় ভালো লাগে যেমন ঘুরে বেড়াতে, ভালো খেতে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে আমি কোন বিষয় নিয়ে শুরু করবো ?

ধরে নিচ্ছি আপনি খেতে খুব ভালো বসেন এবং আপনার শহরে কোথায় কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায় সেটা খুব ভালো ভাবে জানেন। 

তাহলে আপনি ‘Food Vlogging‘ দিয়ে শুরু করতে পারেন। 

দাঁড়ান দাঁড়ান আমি ফ্রিল্যান্সিং এর কথায় আসছি। 

এবার আপনি আপনার মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে Food Vlogging শুরু করলেন এবং ধীরে ধীরে আপনার ইউটুবে চ্যানেলটিতে ভালো ট্রাফিক এলো। 

এর পর আপনি আপনার ভিডিও এর জন্য Youtube SEO শিখতে শুরু করলেন এবং কয়েক দিন পরে এই ব্যাপারে দক্ষ হয়ে উঠলেন। 

এর পর আপনি দেখলেন অন্য যারা Food Vlogging করছে তারা বেশ ভালো ভিডিও এডিটিং ও করছে এবং তাদের ভিডিও গুলো অনেক বেশি আকর্ষণীয় আর তারা অনেক ভিউ পাচ্ছে। 

আপনি আবার নিজের ভিডিও গুলো এডিটিং করা শুরু করলেন এবং কয়েক মাস করে আপনি এ ব্যাপারে দক্ষ হয়ে উঠলেন। 

এর পর আপনি দেখলেন অন্য চ্যানেল গুলো খুব আকর্ষণীয় ভিডিও থাম্বনেইল বা ছবি তৈরী করছে যার জন্য তাদের ভিডিওতে ভিউ বাড়ছে। 

আপনি ওদের দেখা দেখি ভিডিও থাম্বনেইল বানানো শিখতে শুরু করলেন এবং কিছু দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন করলেন।  

তাহলে আপনি কয়েক মাস পরে তিনটি স্কিল বা দক্ষতা অর্জন করলেন।

  1. ইউটুবে SEO
  2. ভিডিও এডিটিং
  3. থাম্বনেইল তৈরী  

এবার আপনি অন্য ইউটুব চ্যানেলদের এই তিনটি সার্ভিস নেওয়ার জন্য আবেদন করলেন। 

যদি দিনে ১০ টি ইমেইল করেন (মানে মাসে কম বেশি ৩০০ টি) তার মধ্যে ১০টি কাজ পান তাহলে কম করে আপনি $৫০০ আয় করতে পারবেন। 

তাহলে বুঝতে পারছেন কি ভাবে আপনার শখ আপনাকে ধীরে ধীরে একটি আয়ের সন্ধান দেবে। 

এ ছাড়াও আপনার Food Vlogging থেকেও আপনি Youtube থেকে, পেইড প্রমোশন করে , এফিলিয়েট মার্কেটিং করে আলাদা ভাবে আয় করতে পারবেন।

অবশই পড়ুন: কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করবো

অন্য কারুকে দেখে প্রভাবিত হবেন না (Don’t be influenced by others):

অন্য কোনো ফ্রীলান্সার দাদা বা ভাই কে দেখে প্রভাবিত হবেন না। 

এই দাদা ২ মাসে এতো ডলার আয় করেছে ইত্যাদি দেখে একদম প্রভাবিত হবেন না। 

কারণ তারা হয়তো এই প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের কোনো প্রোডাক্ট যেমন কোনো কোর্স বিক্রয় করতে চাইছে। 

কারুর কথা বিশ্বাস করে কোনো কোর্স কেনার আগে অবশই দেখে নিন তিনি কত দিন কাজ করছেন, তার কোনো অনলাইন প্রোফাইল আছে কিনা , সেখানে তিনি কতটা সফল ইত্যাদি।

শুধুমাত্র ভবিষৎমুখী জিনিস শেখা (Learning only forward-looking things):

অনেকেই ফেসবুক গ্রুপ এ জানতে চান কোন স্কিলটির ভবিষৎ কেমন। মানে ওই স্কিলটি শিখলে ভবিষতে কাজ পাওয়া যাবে কিনা ?

আমি বলবো আগে নিজের ভালো লাগার বিষয়টির ওপর নির্ভর করে স্কিল বা দক্ষতা গড়ে তুলুন , সেখান থেকে আয় শুরু করুন তার পর এই সব ভাববেন। 

যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে শেখা, কাজ করা শুরু করুন তার পর এ সব ভাববেন। 

আলাপ আলোচনা, চিন্তা ভাবনা করতে করতে সময় ও বয়স দুটোই চলে যাবে। 

প্রতিযোগিতাকে ভয় পাওয়া (Fear of Competition):

অনেকেই ফ্রিল্যান্স শুরু করার আগে যে সেক্টর এ প্রতিযোগিতা কম সেখানে শিখতে চায়। 

যেমন ধরুন গ্রাফিক্স ডিজাইন। 

আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন এর পর আগ্রহ আছে এবং আপনি দেখলেন গ্রাফিক্স ডিজাইন এ খুব প্রতিযোগিতা। 

তাহলে কি আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন না? 

অবশই শিখবেন। 

প্রথমে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে নিয়ে তার মধ্যে মাইক্রো নিচ খুঁজে বার করুন। যেমন প্রোডাক্ট প্যাকেজিং ডিজাইন। 

তাই প্রতিযোগিতাকে ভয় পেয়ে কোনো কিছু শেখা থেকে পিছিয়ে যাবেন না। 

মনে রাখবেন যেখানে প্রতিযোগিতা আছে সেখানেই উপার্জন করার সুযোগ আছে। 

অবশই পড়ুন: কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং কি ভাবে শুরু করবো 2023

ChatGPT নিয়ে দুশ্চিন্তা (Worriedness about ChatGPT):

এটি একটি নতুন সমস্যা। 

অনেকেই ফ্রীলান্স শুরু করার আগে ভাবেন যে, যে স্কিলটা তারা শিখতে চলেছেন সেটা ভবিষ্যতে নিষ্প্রয়োজন হয়ে যাবে। 

এটা মনে রাখতে হবে যে chatgpt একটি সফটওয়্যার যাতে যে সব ডাটা আছে তার হিসেবে রেজাল্ট গুলি দেখায়। 

Chatgpt র কোনো সৃজনশীলতা, চিন্তা করার শক্তি নেই। 

তাই আপনি যে স্কিল শিখুন না কেন সেটা chatgpt থেকে অনেক বেশি ভালো হবে। 

যেমন ধরুন কনটেন্ট রাইটিং। 

এখন অনেকেই chatgpt র মাধ্যমে কনটেন্ট রাইটিং করে কাজ চালাচ্ছে। 

এর পর যদি গুগল এর কোনো নতুন আপডেট আসে এবং এই কনটেন্ট গুলো কপি কনটেন্ট হিসেবে ধার্য হয় তখন ওই ব্লগ বা ওয়েবসাইট এর হাল কি হবে ?

কিন্তু আপনি নিজে যদি কনটেন্ট রাইটিং শিখে কনটেন্ট পাবলিশ করেন, সেটা হয়তো চ্যাট gpt মতো হবে না কিন্তু সেটা কোনো কপি কনটেন্ট হিসেবে ধার্য হবে না। 

কনটেন্ট রাইটিং করতে করতে আপনি একদিন চ্যাটজিপ্ট থেকে ভালো কনটেন্ট লিখতে পারবেন। 

তবে যে কোনো স্কিল শিখুন না কেন কমিউনিকেশন স্কিল বা ইংলিশ ভাষায় সাবলীল কথা বলা ও লেখা এবং ডিজিটাল মার্কেটিং আপনাকে পরে শিখতেই হবে নিজের ফ্রীল্যান্সি ক্যরিয়ার টি ভালো করে গড়ে তোলার জন্য। 

আর একটি কথা যে কোনো স্কিল শিখুন না কেন তার ‘মাইক্রো নিচ’ খুঁজে বের করে তাতে কাজ করুন। অনেক তাড়াতাড়ি সফলতা আসবে।

বর্তমানে এবং ভবিষতে আমার মতে যে বিষয় গুলির চাহিদা থাকবে তা হলো :

  1. কপি রাইটিং 
  2. ভিডিও এডিটিং
  3. পেইড এড 
  4. কনটেন্ট  ক্রিয়েশন
  5. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট 

ওপরের যে কোনো বিষয় দক্ষতা অর্জন করার সাথে সাথে কমিউনিকেশন স্কিল, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ক্লায়েন্ট খুঁজে বার করার মতো সফ্ট স্কিল গুলো শিখতে হবে। 

আর একটি কথা ফ্রীল্যান্সি এর জন্য কোনো কোর্স কেনার আগে ভালো করে খোঁজ খবর করে তবেই কিনবেন। ভবিষ্যতে এই বিষয় একটি নিবন্ধ দেওয়ার ইচ্ছে রইলো। 

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে সেরা ৫ টি পরামর্শ (Top 5 Tips Before Starting Freelancing) – নিবন্ধটি কেমন লাগলো অবশই কমেন্ট করে জানান। আপনি এর মধ্যে কোন বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী তাও জানাতে ভুলবেন না। 

ধন্যবাদ।

Leave a Comment