কিভাবে ফাইভার থেকে আয় করবেন

আপনাদের অনেকেরই হয়তো ফাইভার এ একাউন্ট আছে কিংবা আপনারা ফাইভার একাউন্ট বানিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইছেন। অনেকের মতো আপনাদের ও মনে প্রশ্ন জাগে যে কিভাবে ফাইভার থেকে আয় করবেন। এই নিবন্ধে আমি সেই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। 

ফাইভার হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম। কিন্তু অন্য প্লাটফর্ম গুলোর সাথে এর একটু পার্থক্য আছে। 

এখানে কোনো প্রজেক্ট র জন্য বিড বা আবেদন করতে হয় না। এখানে নিজের নিজের গিগ বানাতে হয় এবং সেটা যদি ক্লায়েন্ট এর পছন্দ হয় তাহলে তারা আপনাদের কাজ দেবে। 

এখন যদি আপনি ওয়েবসাইট ডিসাইন সার্ভিস দিয়ে থাকেন তাহলে ফাইভার সার্চ বার এ ওয়েবসাইট ডিসাইন বলে সার্চ করলে ৬৫,৪৪০ জনের গিগ দেখা যাবে। এর মধ্যে অনেকেই ভালো রেটিং এবং রিভিউ আছে।  তাহলে এখন প্রশ্ন হলো কি করে আপনি তাদের মধ্যে থেকে নিজ্যের গিগ বা সার্ভিস কে রাঙ্ক করাবেন। 

আসুন জেনে নেওয়া যাক কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস এই ব্যাপারে :

১. ফাইভার থেকে আয় করবেন – প্রতিদিন নিজের গিগের টাইটেল আপডেট করুন :

আপনি যদি ফাইভার থেকে কাজ পেতে সত্যি আগ্রহী হন তাহলে প্রতিদিন নিজের গিগ গুলোকে আপডেট করুন। কিভাবে আপডেট করবেন?

প্রথমে আপনার গিগ বিষয়টি নিয়ে ফাইভার সার্চ করুন। দেখুন অন্য টপ রেটেড সেলার রা গিগ এ কি টাইটেল পোস্ট করেছে। তারা কি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করেছে। 

যে কোনো একটি টপ সেলার এর গিগ এ ঢুকে তার টাইটেল এ যে সব কীওয়ার্ড আছে সেগুলো নিজের গিগ এ ব্যবহার করুন। 

ধরুন আপনি আপনার গিগ এ লিখেছেন : I will design wordpress website. 

এবার আপনি এখানে কিছু লং টেইল কীওয়ার্ড (Long tail keyword) ব্যবহার করুন। যেমন : I will design responsive business wordpress website.

এতে কি হলো ? আপনি আরো কিছু নতুন কীওয়ার্ড কে টার্গেট করলেন।

২. প্রতিদিন নিজের গিগের ডেসক্রিপশন কে আপডেট করুন :

নিজের গিগের ডেসক্রিপশন কে প্রোটিন পারলে আপডেট করুন। এটা বেশি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার নয়।  

ওপরের উদাহরণটি ধরে বলতে পারি যে সব লং টেইল কীওয়ার্ড (Long tail keyword) গুলি টাইটেল এ ব্যবহার করেছেন সেগুলো আস্তে আস্তে গিগের ডেসক্রিপশন ব্যবহার করুন।  

অবশ্য কীওয়ার্ড গুলো সুন্দর ভাবে ডেসক্রিপশন সাথে মানিয়ে যায়। কোনো ভাবে যেন এটা মনে না হয় যে আপনি আলাদা করে ডেসক্রিপশন ঢুকিয়েছেন। 

৩. FAQ আপডেট করুন:

যে সব সেলাররা একই সার্ভিস দিচ্ছেন তাদের গিগ গুলো ভালো ভাবে স্টাডি করুন। তারা যে সব FAQ লিখেছে সেগুলো দেখুন। আন্দাজ করার চেষ্টা করুন ক্লায়েন্ট যে ক্লায়েন্ট যদি আপনার থেকে এই সব সার্ভিস নেয় তাহলে তার এর কি কি সার্ভিস এর দরকার হতে পারে। 

ধরুন কেউ যদি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট বানানোর সার্ভিস নিয়ে থাকেন আপনার কাছ থেকে তাহলে সে হয়তো আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারে যে আপনি কি লোগো ডিসাইন করেন? বা আপনি কি কনটেন্ট রাইটিং এর সার্ভিস দেন।  

কখনো কোনো ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্ট কে বলা যাবে না যে এটা আমি পারি না বা জানি না।  

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লায়েন্ট চান এমন একজন সার্ভিস প্রোভাইডার যে সম্পূর্ণ ওয়েবসাইট বানিয়ে দেবে।  ক্লায়েন্ট কে অন্য সার্ভিস র অন্য কারো কাছে যেতে হবে না। 

যদি কনটেন্ট লিখতে না পারেন তাহলে ফাইভার থেকে কাউকে দিয়ে কনটেন্ট লিখিয়ে নিন বা লোগো ডিসাইন চাইলে কাউকে দিয়ে লোগো করিয়ে নিন। 

কিন্তু আমি পারি না , জানি না এগুলো না বলাই ভালো। 

বেশির ভাগ ক্লায়েন্ট এ সিঙ্গেল উইন্ডো সার্ভিস (single window service) চান। যেখানে সব কিছু পাওয়া যাবে। 

ব্যাক্তিগত জীবনে দেখুন আপনি কেন একটি মুদির দোকানের পরিবর্তে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যাওয়া পছন্দ করেন। কারণ সেখানে একই ছাদের তলায় আপনি সব কিছু পেয়ে যান। ঠিক কিনা ?

৪. গিগের ছবি বা ভিডিও আপডেট করুন :

আপনার মতো যারা একই সার্ভিস দেয় ফাইভার তারা কি ধরণের ছবি বা ভিডিও গিগ এ দিয়েছেন সেটা ভালো করে দেখুন। 

কারণ যখন কোনো সার্ভিস ফাইভার সার্চ করা হয় তখন সার্চ রেজাল্ট এ সার্ভিস প্রোভাইডার দের ছবি , প্রোফাইল নাম, গিগ টাইটেল , রেটিং এবং প্রাইস আসে।  এর মধ্যে রেটিং এবং প্রোফাইল নাম চেঞ্জ করা আপনার হাতে নেই। 

তাহলে আপনি ছবি, গিগের টাইটেল আর প্রাইস এগুলো চেঞ্জ করতে পারেন। 

ফাইভের গিগ পিকচার টি যেন আকর্ষণীয় হয়। অন্য কারো গিগ পিকচার নকল করবেন না কক্ষনো। 

গিগ ইমেজটির সাইজও যেন ৫৫০x ৩৭০ এর বেশি না হয়। 

পারলে আপনার একটি প্রফেশনাল ছবি এখানে দিতে পারেন তার সাথে গিগের গুরুত্বপূণ পয়েন্টস গুলো তুলে ধরুন। 

গিগ ইমেজ টি *jpg ফরম্যাটে সেভ করুন। ইমেজটির নাম দিন আপনার গিগের কীওয়ার্ড দিয়ে। কীওয়ার্ড এর মাঝে অবশ্যৈ dash দিতে ভুলবেন না। 

যদি কেউ গিগের জন্য আলাদা করা ভিডিও বানাতে পারে তাহলে ফাইভার মোট অনুযায়ী আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভবনা আরো বাড়বে। 

ভাবছেন কি করে গিগ নিয়ে ভিডিও বানাবেন?

গিগের জন্য ফ্রীতে ভিডিও বানানোর শ্রেষ্ঠ জায়গা হলো ক্যানভা (Canva). এখানে gmail id দিয়ে লগইন করে ফ্রি তে ভিডিও বানিয়ে নিন। 

ভিডিওটি অবশৈই যেন ৭৫ সেকেন্ডস থেকে বেশি এবং ৫০mb থেকে বড়ো না হয়। 

এখানে আপনি গিগের জন্য ইমেজ ও বানাতে পারেন।  

যদি এগুলো বানাতে খুব সমস্যা হয় তাহলে ফাইভার থেকে কাউকে দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। 

আপনার যদি ইমেজ seo সম্পর্কে ধারণা থাকে ভালো নইলে ইউটুবে ইমেজ seo সম্পর্কে অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। সেগুলো একবার দেখে নিতে পারেন। 

৫. গিগ গুলোকে সোশ্যাল শেয়ার করুন:

আপনার যদি ফ্রীল্যানসিং ওয়েবসাইট থাকে বা ফেসবুক পেজ থাকে তাহলে সেখানে গিগ গুলো শেয়ার করুন।  

যদি আপনি ফ্রীল্যানসিং সবে শুরু করে থাকেন তাহলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।  আপনি গুগল সাইট বা ব্লগস্পট দিয়ে ফ্রি তে আপনার একটা সাইট বানিয়ে নিন।  

যদি একটি প্রফেশনাল সার্ভিস ওয়েবসাইট বানাতে চান তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

এর পর যে নাম সাইট বানালেন একই নাম ফেইসবুক পেজ বানিয়ে নিন।  পারলে একটা গুগল মাই বিসনেস  এ নিজের ব্যবসাকে রেজিস্ট্রি করুন। এর সাথে লিঙ্কেডিন এ একটা বিসনেস প্রোফাইল বানিয়ে নিন। 

প্রতিটা প্লাটফর্ম এ সপ্তায় অন্তত ৩ দিন আপনার গিগ গুলো শেয়ার করেন। 

যদি আপনি ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে সাবলীল হন তালে মিডিয়াম (medium) ও অন্যান সাইট গিয়ে নিজের এই গিগ গুলো নিয়ে গেস্ট পোস্টিং করুন। 

Quora ও Reditt এ নিজের প্রোফাইল বানিয়ে একটিভ থাকেন এবং সেখানে আস্তে আস্তে নিজের গিগ গুলো কে প্রোমোটে করুন। 

সর্বোপরি আপনি যদি ভালো SEO জানেন তাহলে খুব সহজেই নিজের গিগের ভিসিবিলিটি বাড়াতে পারবেন এবং Fiverr থেকে তাড়াতাড়ি প্রজেক্ট পাবেন । 

৬. সব সময় অনলাইন থাকেন :

মোবাইল এ ফাইভার এপ্স টি ইনস্টল করে নিন। সেখানে সব সময় লগইন করে অনলাইন থাকুন। 

সেই সঙ্গে যখন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এ কাজ করতে বসেছেন তখন ব্রাউসার একটি ট্যাব এ ফাইভার একাউন্ট এ লগইন হয়ে অনলাইন থাকেন। 

কারণ যখন কেউ কোনো সার্ভিস দিয়ে সার্চ করে তখন ‘online sellers’ বলে একটি অপসন থাকে।  যদি আপনি সব সময় অনলাইন থাকেন তাহলে যে সব ক্লায়েন্ট রা এই অপসন টি অন করে সার্চ করবেন আপনার গিগটি সেই সার্চ রেজাল্ট এ আসার সম্ভবনা থাকবে। 

৭. লো কম্পেটিশন নিচ খুঁজে বার করুন :

আপনি যদি নতুন সেলার হন এবং হাই কম্পেটিটন নিচে সার্ভিস দিতে চান সেক্ষেত্রে আপনার কাজ পেতে অনেক সময় লাগবে। 

কেননা আপনার প্রোফাইল টি নতুন এবং আপনার কোনো রেটিং বা রিভিউ নেই। 

তাই আমার মনে হয় আপনার বিষয় এর ওপর লো কম্পেটিশন নিচ খুঁজে বার করেন যেখানে অনেক কম সংখ্যক সার্ভিস প্রোভাইডার রা আছেন। 

উদাহরণ স্বরূপ আগেই বলেছি I will design a responsive business WordPress website.

এক্ষেত্রে আপনি একই সার্ভিস যারা দিচ্ছেন তাদের গিগ গুলো স্টাডি করুন।  দেখুন তারা কি কি সার্ভিস দিচ্ছে এবং সেই সব সার্ভিস র কম্পেটিশন কেমন। 

আপনি যদি কীওয়ার্ড রিসার্চ বা SEO কাজ জানেন তাহলে সহজে লো কম্পেটিশন নিচ্ খুঁজে পেতে পারেন। 

৮. ফাইভার এ ফ্রি কোর্স টি করুন : 

ফাইভার অনেক গুলো কোর্স করার সুযোগ আছে। এগুলো করলে আপনার প্রোফাইল তা বুস্ট হবে এবং কাজ পাওয়ার সম্ভবনা বাড়বে। 

কিন্তু দুঃখের বিষয় এ গুলো সবই পেইড কোর্স মানে পয়সা দিয়ে শিখতে হয়। 

যদি আপনি নতুন ফ্রীল্যানসিং শুরু করে থাকেন তাহলে ‘Online Freelancing Essentials‘ কোর্স টি করতে পারেন।

এটাই একমাত্র ফ্রি কোর্স।  এর পর কাজ এলে , উপার্জন হলে বাকি পেইড কোর্স গুলো ধীরে ধীরে করতে পারেন।

প্রসঙ্গত বলে রাখি এই কোর্সটি করলে আপনার প্রোফাইল এ লেফট সাইডবার এ লার্ন বাক্স এর মধ্যে এই ব্যাজ টি শো করবে। 

উপসংহার : বর্তমান সময় ফাইভের থেকে কাজ পাওয়া কোনো অসম্ভব কিছু নয়। শুধু প্রতিদিন একটু একটু করে প্রোফাইল এবং গিগ গুলো কে আপডেট করুন। ভালো করে ফাইভার সার্চ টিকে বোঝার চেষ্টা করুন। নতুন এবং পুরোনো সেলারদের গিগ গুলো ভালো করে স্টাডি করুন। আশা করি আপনি খুব শিগগিরই ফিভারের থেকে আপনার প্রথম অর্ডার টি পাবেন এবং আপনার ফ্রীল্যানসিং ক্যরিয়ার এর শুভ সূচনা হবে। কিভাবে ফাইভার থেকে আয় করবেন এই পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যৈ কমেন্ট করুন আর শেয়ার করুন ।

Leave a Comment