কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করবো

এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই অল্প বিস্তর পরিচিত। এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করবো এফিলিয়েট মার্কেটিং কি , কি ভাবে আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং করবো এবং কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে টাকা উপার্জন করবো (How to earn money from Affiliate Marketing in Bangla)

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর অর্থ হলো অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয় করে কমিশন আয় করা। 

উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি , ধরুন কোনো কোম্পানি কোনো একটি নতুন পণ্য বাজারে আনলো।  এবার সেই প্রতিষ্ঠান ওই পণ্যের এফিলিয়েট দেয়া শুরু করলে পণ্য বিক্রয় করার জন্য।  এবার আপনি সেই পণ্যের এফিলিয়েট নিয়ে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে ওই পণ্য বিক্রয় করলেন এবং ওই প্রথিষ্ঠান আপনাকে একটা ভালো টাকা কমিশন দিলো ওই পণ্যের বিক্রয় মূল্যের ওপর। 

তাহলে এক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি যে এখানে তিনটি লোক বা প্রতিষ্টান এর সাথে যুক্ত। এক হচ্ছে যে পণ্যটি তৈরী করে , দুই হচ্ছে আপনি বা এফিলিয়েট মার্কেটার যে পণ্যটি বিক্রয় করে এবং শেষে হচ্ছে ক্রেতা যে পণ্যটি কেনে। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং কি ভাবে শুরু করবো (How to start Affiliate Markting in Bangla ?

এফিলিয়েট মার্কেটিং অনেক ভাবে শুরু করা যায়। 

১. আপনি একটি ব্লগ ওয়েবসাইট বানালেন এবং তাতে কোনো পণ্য সম্পর্কে তর্থ্য দিলেন।  যখন ভিজিটররা আপনার ব্লগ এ এলো এবং আপনার আর্টিকেল টি পরে এফিলিয়েট লিংক এ ক্লিক করে কোনো প্রোডাক্ট কিনলো এবং আপনি কমিশন পেলেন। 

২. একটি ইউটুব চ্যানেল বানালেন এবং যখন চ্যানেল টি অনেক প্রচার পেলো , অনেক ভিউ এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়লো তখন ওই চ্যানেলের মাধ্যমে আপনি এফিলিয়েট প্রোডাক্ট সেল করলেন। 

৩. আপনি যদি ইমেইল মার্কেটিং জানেন তাহলে আপনার কোনো একটি বিষয় বা নিচ ভিত্তিক ইমেইল কালেক্ট করলেন। তার পর ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার এফিলিয়েট প্রোডাক্ট সেল করলেন। 

৪. আপনি আপনার দক্ষতার ওপর ভর্তি করে কোনো কোর্স নিয়ে এলেন এবং সেই কোর্স টি বিক্রয় করার সাথে সাথে আপনার এফিলিয়েট প্রোডাক্ট বিক্রয় করলেন। 

৫. গুগল বা ফেসবুক বিজ্ঞাপন দিয়ে একটি ল্যান্ডিং পেজ বানিয়ে আপনি আপনার প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন। 

তাহলে আমরা জানতে পারলাম যে কি কি ভাবে আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারেন এবং আয় করা শুরু করতে পারেন। 

এর পর যে প্রশ্নটা অবশই আপনার মনে আসবে সেটা হলো –

কি কি প্রোডাক্ট নিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবো (Which products are best for Affiliate Marketing in Bangla) ?

যদি আপনি নতুন হন এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে তাহলে অবশই কোনো সহজ প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করা উচিত। 

এমন প্রোডাক্ট নির্বাচন করুন যার মার্কেট এ কম্পেটিশন কম। 

সাধারণত যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং এ নতুন তারা আমাজন প্রোডাক্ট নিয়ে শুরু করেন। 

যদি আমাজন নিয়ে শুরু করেন তবে ব্লগের মাধ্যমে বিক্রয় করাটাই সব থেকে সহজ। 

তবে বর্তমানে আমাজন প্রোডাক্ট এর কমিশন রেট খুব কম। তাই খুব বুঝে শুনে প্রোডাক্ট শুরু করুন। 

আর যদি একটু বেশি টাকার কমিশন আয় করতে চান তাহলে clickbank, jvzoo, shareasale প্রোডাক্ট নিয়ে শুরু করতে পারেন। 

কিন্তু মনে রাখবেন এই সব প্রোডাক্ট কমিশন বেশি হবার সাথে সাথে এই সব প্রোডাক্ট এর কম্পেটিশন বা প্রতিযোগিতাও কিন্তু খুব বেশি। 

কিছু সহজ ও লাভ জনক এফিলিয়েট প্রোডাক্ট হলো :

১. আমাজন এর প্রোডাক্ট 

২. ডোমেইন এবং হোস্টিং 

৩. ওয়ার্ডপ্রেস থিম 

৪. কোর্স 

৫. অনলাইন সফটওয়্যার 

এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) শুরু করার জন্য যে সব স্কিল বা দক্ষতা গুলো প্রয়োজনীয়ও

কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করবো
এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) শুরু করার জন্য যে সব স্কিল বা দক্ষতা গুলো প্রয়োজনীয়ও

এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনার SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। 

এর মধ্যে কীওয়ার্ড রিসার্চ, নিচ রিসার্চ, কনটেন্ট রাইটিং, ব্যাকলিঙ্ক তৈরী করা, ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা খুব জরুরি। 

এর সাথে যদি নিজে একটি এফিলিয়েট ওয়েবসাইট বানাতে পারেন , যদি মোটামুটি গ্রাফিক্স ডিসাইন নলেজ থাকে তাহলে হয়। 

যদি আপনি সম্পূর্ণ নতুন হন এফিলিয়েট মার্কেটিং এ এবং আপনার যদি অতো টাকা না থাকে তাহলে অবশই ওপরের সব কটা স্কিল এর ওপর ভালো ধারণা থাকা ভীষণ ভাবে জরুরি। 

এর সাথে আপনি যদি ইউটুব এর মাধ্যমে এফিলিয়েট সেল করতে চান তাহলে ভিডিও এডিটিং এর নলেজ থাকাটা জরুরি।

এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কিছু সেরা এফিলিয়েট প্রোগ্রাম (Affiliate Programme)

বর্তমানে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য ছোট বড়ো বিভিন্ন রকমের এফিলিয়েট প্রোগ্র্যাম অনলাইন এ পাওয়া যায়।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো :

১. আমাজন এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক : আমাজন একটি বহুল প্রচলিত এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। বর্তমানে ১২ মিলিয়ন প্রোডাক্ট আমাজানের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়ে থাকে।  ইচ্ছে করলে খুব সহজেই এই এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক এ যোগ দিয়ে ভালো টাকা আয় করা যায়। তবে অবশই মনে রাখবেন যদি ৩ মাসের মধ্যে কোনো সালে না হয় তাহলে আপনার এফিলিয়েট একাউন্ট টি বাতিল হয়ে যাবে। 

২. Clickbank এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক: এটিও একটি খুব প্রচারিত এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। এখানে খুব সহজে একাউন্ট তৈরী করে প্রোডাক্ট এর গ্রাভিটি দেখে ভালো প্রোডাক্ট সিলেক্ট করুন।  এর পর এফিলিয়েট লিঙ্ক তৈরী করে বা হপ লিংক তৈরি করে বিক্রয় করা শুরু করুন। 

৩. CJ Affiliate বা কমিশন জংশন : clickbank এর মতো কমিশন জংশন এ যোগ দিয়ে আপনি মাস গেলে ভালো টাকা আয় করতে পারেন। 

এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার পদক্ষেপ :

affiliate marketing in bangla
এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার পদক্ষেপ (Steps to start Affiliate Marketing)

১. প্রথমে যেটা দরকার সেটা হলো একটি ভালো নিচ বা বিষয় খুঁজে বার করুন। যে নিচ বা বিষয়টি বাজারে চাহিদা আছে , যেটা নিয়ে আপনার জ্ঞান এবং আগ্রহ আছে , যেটা নিয়ে কনটেন্ট তৈরী করতে আপনি সক্ষম এরকম কোনো বিষয় আগে খুঁজে বার করুন। 

২. এর পর ঠিক করুন কি ভাবে আপনি শুরু করবেন। কোনো ব্লগের মাধ্যমে না কোনো ইউটুব এর মাধ্যমে।  আপনি পরামর্শ দেব অবশই কোনো ব্লগের মাধ্যমে শুরু করুন। তার পর ধীরে ধীরে ইউটুব , ফেসবুক ইত্যাদি থেকে ট্রাফিক আপনার ব্লগ সাইট এ নিয়ে আসুন। 

৩. নিচ বাছাই হয়ে গেলে কীওয়ার্ড রিসার্চ করুন। মানি কীওয়ার্ড ও ইনফোরমেটিভ কীওয়ার্ড এর একটি লিস্ট বানান। 

৪. প্রথমে ইনফোরমেটিভ কীওয়ার্ড দিয়ে কনটেন্ট দেওয়া শুরু করুন। তার পর ধীরে ধীরে মানি কীওয়ার্ড এর ওপর কনটেন্ট দেওয়া শুরু করতে পারেন। 

৫. যখন আপনার ওয়েবসাইটটি রাঙ্ক করছে তখন এফিলিয়েট লিঙ্ক গুলো কনটেন্টের মধ্যে দিন। প্রথমেই এফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবহার করবেন না। 

৬. ওয়েবসাইটে ৬০% রাখুন ইনফোরমেটিভ কনটেন্ট এর বাকি ৪০% রাখুন মানি কনটেন্ট।  

অবশই পড়ুন : কনটেন্ট রাইটিং কি | দারুন কনটেন্ট লেখার ৯+ টি টিপস বাংলাতে 2022 

এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কয়েকটি গুরুতূপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর। 

১. এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে কি আয় করা সম্ভব ?

হ্যা, অবশই এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করা সম্ভব। 

২. এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে মাসে কত টাকা আয় করা সম্ভব ?

এর কোনো ঊর্ধসিমা নেই। আপনি যেরকম কাজ করবেন , যতটা পরিশ্রম করবেন সেই অনুপাতেই আয় করতে পারবেন। 

৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক এ যোগ দিতে কত টাকা লাগে ?

এফিলিয়েট মার্কেটিং এ যোগ দিতে কোনো টাকা লাগে না। 

৪. এফিলিয়েট ওয়েবসাইট এ এডসেন্স ব্যবহার করা যায় ?

অবশই যায়।  তবে শুরুর দিকে না করাই ভালো। 

অবশই পড়ুন : মেয়েদের ঘরে বসে রোজগার করার উপায় ২০২২

কিছু ভালো এফিলিয়েট মার্কেটিং এর কোর্স :

যদি আপনি কোনো ভালো কোর্স করে এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চান তাহলে এই কোর্স গুলো অনলাইন এ কিনতে পারেন :

১. কূলবন্ত নেগি এফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স : যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত তারা কূলবন্ত নেগি এই নামটির সাথে অবশই পরিচিত। 

এটি এফিলিয়েট মার্কেটিং এর ওপর একটি ভালো কোর্স।  বর্তমানে এই কোর্সটির মূল্য ১৪,০০০/-.

২. NShamimPRO কোর্স : যদি আপনি একটি ভালো এফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স বাংলায় করতে চান তাহলে অবশই এই কোর্স টি ক্রয় করুন। 

এটি একটি খুব ভালো একটি কোর্স বাংলা ভাষায়। এটি বাংলদেশের প্রখ্যাত এফিলিয়েট মার্কেটের N S Shamim বিশেষ যত্ন সহকারে দ্বারা তৈরী।

৩. Mr Vyas Youtube Channel: যদি আপনি ফ্রি তে এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে চান তাহলে অবশই কীর্তিস ভ্যাস দ্বারা পরিচালিত এই চ্যানেল টি ফলো করতে পারেন। এখানে এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভালো ভালো ভিডিও আছে। 

৪. Ismail Blogger Youtube Channel: এটিও এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার জন্য ভালো ইউটুব চ্যানেল। এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে অবশই এই চ্যানেলটি ফলো করুন। 

৫. Greg Gottfried Youtube Channel: ইংলিশ ভাষায় এফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার জন্য একটি ভালো চ্যানেল।  

পরিশেষে , বর্তমান যুগে এফিলিয়েট মার্কেটিং একটি ভালো উপায় অনলাইন মাধ্যম থেকে আয় করার।  তবে এটি থেকে আয় করতে সময় লাগে। তাই আপনি যদি ভালো করে কাজ করেন এবং লেগে থাকেন তাহলো নিশ্চই আপনি একদিন এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে ভালো টাকা আয় করতে পারবেন। আশা করি আপনাদের কাছে এটা এখন পরিষ্কার যে এফিলিয়েট মার্কেটিং কি , কি ভাবে আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং করবো এবং কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে টাকা উপার্জন করবো। তাই আর দেরি না করে আজ থেকেই আপনার এফিলিয়েট মার্কেটিং এ পথ চলা শুরু করুন। 

Leave a Comment