কিভাবে মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট পাবেন?
বর্তমানে পরিচিত যেসব ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলো আছে সেখান কাজ যোগাড় করা দিনে দিনে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই আজ এই নিবন্ধে আমি আলোচনা করবো কিভাবে মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট পাবেন (How to get clients from outside the marketplace)?
Table of Contents
মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট পাবার সুবিধা গুলো :
১. কাজ করার জন্য কারুকে ২০% বা ১০% কমিশন দিতে হবে না।
২. আপনার কাজের মূল্য মার্কেটপ্লেসের থেকে অনেকটাই বেশি পাবেন।
৩. এটির ফলে ক্লায়েন্ট এর সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
৪. একবার যদি এই বিষয়টি রপ্ত করতে পারেন তাহলে ক্লায়েন্ট পাওয়া নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না।
প্রথমেই বলি মার্কেট প্লেসের বাইরে থেকে কাজ জোগাড় করার জন্য আপনাদের যে কোনো একটি বিষয়ের ওপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এর পর আপনাদের নিজেদের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানাতে হবে। সেই ওয়েবসাইটটিতে নিজেদের কাজ, টেস্টিমোনিয়াল ইত্যাদি তুলে ধরতে হবে।
এবার আপনাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলোতে একাউন্ট তৈরী করতে হবে।
যে নামে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইটটি বানাবেন সেই একই নামে সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলো তৈরী করবেন। যাতে গুগল এ সার্চ করলে আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় এবং আপনার ক্লায়েন্টএর কাছে এটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
এবার আসুন জেনে নিই কি ভাবে মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট পাবেন?
এটি দুরকম হয়।
১. ইনবাউন্ড ক্লায়েন্ট মেথড (Inbound client method)
২. আউটবাউন্ড ক্লায়েন্ট মেথড (Outbound client method)
প্রথমে আলোচনা করি ইনবাউন্ড ক্লায়েন্ট মেথড নিয়ে।
ইনবাউন্ড ক্লায়েন্ট মেথড। … সেটা কি?
যখন কোনো ক্লায়েন্ট নিজে থেকে এসে আপনাকে কাজের জন্য বলে তাকে বলে ইনবাউন্ড ক্লায়েন্ট।
সেটি কি করে সম্ভব ?
আপনি আপনার স্কিল তৈরী হয়ে গেলে একটি নির্দিষ্ট নিচ বা বিষয় নির্বাচন করুন।
যেমন ধরুন : আপনি লিড জেনারেশন করেন শুধু মাত্র রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের জন্য।
এর পর আপনি দেখুন আপনার ভবিষৎ ক্লায়েন্টরা কোথায় একটিভ আছে। মানে কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এ একটিভ আছে।
এবার সেই সব সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এ নিজের একটি প্রফেশনাল একাউন্ট বানান। সেখানে ওই ক্লায়েন্টদের উদ্দেশ্য করে কনটেন্ট দেওয়া শুরু করুন।
যদি আপনার কনটেন্ট এ কোয়ালিটি থাকে তাহলে ক্লায়েন্টরা নিজেরাই আপনার সাথে কাজের জন্য যোগাযোগ করবেন।
মনে রাখবে এই পদ্ধতি কিন্তু অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এটা তো গেলো ইনবাউন্ড ক্লায়েন্ট হান্টিং মেথড।
এবার আশা যাক অউটবউন্ড ক্লায়েন্ট হান্টিং মেথড এ।
সেগুলো হলো যথাক্রমে :
১. সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ক্লায়েন্ট পাওয়া
আগের ইনবাউন্ড মেথড অনুযায়ী আপনারা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এ একাউন্ট তৈরী করেছেন এবং কোয়ালিটি কনটেন্ট দিচ্ছেন।
কয়েক সপ্তাহ পর যে সব ক্লায়েন্টদের আপনার সার্ভিস দেওয়া যায় বলে মনে করেন তাদের একটি লিস্ট বানান এক্সেল বা গুগল শিট এ।
ধরুন আপনি রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের জন্য লিড জেনারেট করেন এবং আমেরিকা আপনার পছন্দের দেশ।
এবার খুঁজে বার করুন আমেরিকার কোন রাজ্যে রিয়েল এস্টেট এর কাজ বেশি হয়।
এর পর গুগল সার্চ করুন ‘রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ইন নিউ ইয়র্ক’ (উদাহরণ স্বরূপ)
সেখান থেকে আপনার ক্লায়েন্টদের খুঁজে বার করুন।
এর পর গুগল শিট এ লিখুন তাদের নাম, ওয়েবসাইট এড্রেস, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এর লিংক ইত্যাদি।

এর পর খুঁজে দেখুন যে তারা কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশি একটিভ। মানে কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে নিয়মিত কনটেন্ট দেয়। অন্যদের কন্টেন্টের সাথে লাইক, শেয়ার ও কমেন্ট করেন তারা।
এর পর তাদের কনটেন্ট এ আপনি নিয়মিত লাইক এবং কমেন্ট করুন।
কমেন্ট অবশই ভ্যালুএবলে করুন যাতে আপনি তাদের নজরে আসেন। শুধু মাত্র ‘Great Post’ বা ‘Awesome’ এরকম কিছু লিখবেন না।
ভালো করে তাদের পোস্ট পড়ে বুঝে শুনে কমেন্ট করুন। এর জন্য কোনো টুলস ব্যবহার করবেন না।
চেষ্টা করুন পোস্ট করার সাথে সাথে প্রথম কমেন্ট করতে। কমেন্টের মধ্যে কিছু ভালো প্রশ্নও করতে পারেন।
এর পর তারা যখন আপনার কমেন্ট এ সাড়া দেবে আপনি তাদের সাথে চ্যাটে কথা বলুন।
কখনোই আপনি নিজের সার্ভিস প্রথমেই তাদের নিতে বলবেন না।
তাদের সাথে আস্তে আস্তে পরিচিতি গড়ে তুলুন।
এর পর তাদের জিজ্ঞেস করুন যে ব্যবসা কেমন চলছে? ব্যবসা করার সময় তোমার মূল সমস্যাটা কি হচ্ছে ?
দরকারে তাদের কিছু বিনামূল্যে উপদেশ দিন।
একদম শেষে নিজের সার্ভিসটি নিতে বলুন।
নিঃসন্দেহে এটি একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কি ভাবে ক্লায়েন্টর সাথে কথা বলতে হবে ধীরে ধীরে তা শিখতে হবে।
আরো পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে সেরা ৫ টি পরামর্শ
২. কোল্ড ইমেইল এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট পাওয়া (Getting Clients through Cold Email) :
আগের মতোই একটি নিচ্ বা বিষয় নির্বাচন করুন।
তার পর আমেরিকার কোনো একটি রাজ্যকে লক্ষ্য করে ক্লায়েন্টদের বিবরন গুলো এক্সেল শিট বা গুগল শিট এ লেখা শুরু করুন।
এর পর যে সব ক্লায়েন্টরা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এ ততটা সক্রিয় নয় কিন্তু আপনি মনে করছেন যে তাদের আপনার সার্ভিস দরকার হতে পারে তাদের ইমেইল করুন।
প্রথমে তাদের ব্যাবসার সমস্যাটির সম্পর্কে ধারণা করুন।
তাদের সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট এ কি কি খামতি আছে খুঁজে বার করুন এবং তাদের ইমেইল করুন।
কোল্ড ইমেইল করার সময় যে বিষয় গুলো অবশই মনে রাখবেন :
১. ইমেইল সাবজেক্ট লাইন টি যেন অবশই ভালো হয়. সাবজেক্ট লাইনটি আপনারা chatgpt এর মাধ্যমে তৈরী করুন। এর পর Coschedule Headline Analyzer এর সাবজেক্ট লাইনটি কতটা ভালো হলো দেখে নিন। দরকারে কিছু পরিবর্তন করুন। কিছু Power Word ব্যবহার করতে পারেন।
২. Mailtrack বলে Chrome ব্রাউসার এ একটি Addon পাওয়া যায়। ওটি ব্যবহার করুন। ওটি বলে দেবে যে কখন কতবার ইমেইল খোলা হয়েছে। যারা ইমেইল খুলে পড়েছে তাদের Follow Up ইমেইল করুন ২ দিন পর পর। Mailtrack এর Free Plan আছে।
৩. কোল্ড ইমেইল এর সাথে যদি Loom Video তে একটি ভিডিও করে পাঠাতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়। ওই ভিডিওতে বলবেন আপনি কে , আপনি ক্লায়েন্টের ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কি কি ত্রুটি দেখেছেন এবং আপনি কি ভাবে ওই ত্রুটি গুলো ঠিক করতে ওনাকে সাহায্য করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনার ক্লায়েন্ট খুঁজে বার করা এবং তাদের ঠিক ঠাক কোল্ড ইমেইল করাটাই আসল।
৪. অবশই একটি প্রফেশনাল ইমেইল থেকে মেইল করবেন। কোনো পার্সোনাল Gmail থেকে নয়। যদি আপনার নিজের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকে তাহলে তাদের ওয়েবমেইল ব্যবহার করুন। যেমন আপনার নাম @ আপনার ওয়েবসাইট এর নাম ডট কম।
৫. ইমেইল এ অবশই একটি স্বাক্ষর (Email Signature) ব্যবহার করুন। যেমন:
With thanks & regards,
Your Name,
Follow Us: Website, Facebook, Linkedin, Twitter, Instagram
৬. যে ইমেইল ID থেকে ইমেইল করছেন দেখে নেবেন যে সেটা যেন Dkim Spf Dmarc এনাবল হয়। নইলে আপনার ইমেইলটি spam ফোল্ডার এ চলে যেতে পারে। এর জন্য এই ওয়েবসাইট টি ব্যবহার করুন : https://mxtoolbox.com/dmarc/dmarc-email-tools?referrer=cms_dmarchome
৭. ইমেইল এর শেষের দিকে অবশই একটি লাইন এ বলুন যে ক্লায়েন্ট যদি আপনার থেকে ইমেইল না চান তাহলে আপনি আপনার ইমেইল লিস্ট থেকে ওনাকে বাদ দিয়ে দেবেন এবং আর ইমেইল করবেন না। আপনাদের সুবিধার জন্য একটি কোল্ড ইমেইল টেম্পলেট দিলাম। এটা নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন।

এ ছাড়া ফেসবুক এ ‘Fahad Alam‘ ভাই কে ফলো করুন আরো ভালো টিপস পাওয়ার জন্য।
আরো পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং না চাকরি কোনটা করা উচিত 2023 এ
৩. আমেরিকান এজেন্সী এর সাথে কাজ করা (Working with American Agencies):
ধারাবাহিক ভাবে ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য USA, UK, AUS যে বিভিন্ন এজেন্সী আছে তাদের সঙ্গে ‘Tie Up’ করে কাজ করতে পারেন।
প্রথমে গুগল থেকে যে কোনো একটি দেশের যে কোনো রাজ্যকে ভালো ভাবে বিশ্লেষণ করে বেছে নিন।
তার পর গুগল শিট বা এক্সেল এ কোম্পানির নাম, ইমেইল, সিইও নাম, ইমেইল ইত্যাদি লিপিবদ্দ করুন।
যেমন ‘ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানিজ ইন নিউ ইয়র্ক’
তার পর তাদের কোল্ড ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করুন।
এরা যদি কিছু কম টাকাও দেয় তাহলেও এদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ভাবে কাজ করুন।
এতে আপনার কাজের দক্ষতা বাড়বে এবং আপনি নিয়মিত কাজ পাবেন।
ওপরে মার্কেটপ্লেসের বাইরে ক্লায়েন্ট পাবার যে উপায় গুলো বললাম সে গুলো মূলত আমেরিকা এবং তার আসে পাশের দেশের জন্য।
ওপরে যে মেথড গুলো বললাম সেখানে পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানানো ছাড়া বাকি সব ফ্রি মেথড। মানে এর জন্য আপনাকে কোনো পয়সা খরচ বা টুলস কিনতে হবে না।
কিন্তু আপনি যে স্কিল নিয়ে কাজ করুন না কেন এর সাথে ইংলিশ ভাষায় সাবলীল হওয়া, ডিজিটাল মার্কেটিং, ক্লায়েন্ট ক্লোসিং টেকনিক শেখার দরকার আছে।
তাই ক্লায়েন্ট খোঁজার সাথে সাথে এই স্কিলগুলো আয়ত্ত করুন এবং ধৈয্য ধরুন।
আপনি নিশ্চই কাজ পাবেন।
নিচের কমেন্ট এ অবশই জানাবেন এই আর্টিকেল টি কেমন লাগলো এবং আপনি ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন।
আমার নাম অরিন্দম ঘোষ। আমি এই ওয়েবসাইট এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশায় আমি একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনার এবং ব্লগিং আমার প্যাশন। আমি এই সাইট এ ব্লগিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, আর্ন মানি অনলাইন বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। এই সাইট এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাতে কোয়ালিটি কনটেন্ট প্রকাশ করা যা সাইট এর ভিসিটার দের কাজে লাগে।