আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদের অনেকেরই স্বপ্ন নিজের একটা এজেন্সী তৈরী করা। আজ এই প্রতিবেদনে আমি আলোচনা করবো কিভাবে আপনি একটি ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী গড়ে তুলতে পারবেন।
এই প্রতিবেদনটি তাদের জন্য যারা ইতিমধ্যে ফ্রিল্যান্সিং জগতে কিছু টাকা আয় করেছে এবং তাদের নির্দিষ্ট কিছু ক্লায়েন্ট আছে।
যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছেন তাদের অবশই যে কোনো একটি স্কিলের ওপর দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে এবং ক্লায়েন্ট যোগাড় করে তাদের সার্ভিস দেওয়া শুরু করতে হবে।
এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি এজেন্সী গড়ে তুলবেন স্টেপ বাই স্টেপ:
Table of Contents
১. নিয়মিত কাজ পাওয়া (Getting Regular Work)
আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী গড়ে তুলতে চান প্রথমেই চেষ্টা করবেন এমন কিছু স্কিল গড়ে তুলতে যেটা ক্লায়েন্টের মাসে মাসে দরকার হয়।

যেমন ধরুন:
১. কনটেন্ট রাইটিং
২. ভিডিও এডিটিং
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
৪. ফেসবুক এড
৫. গুগল এড
উপরের এই সার্ভিস গুলো যদি আপনি দেন বা এছাড়া এমন কোনো সার্ভিস আপনি দেন যেটা ক্লায়েন্টের প্রতিমাসে দরকার হয় তাহলে আপনি প্রতি মাসে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা পাবেন এবং আপনাকে প্রতি মাসে ক্লায়েন্ট খুঁজতে যেতে হবে না।
এছাড়াও আপনি যদি বিদেশী কোনো কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেন তাহলে আপনাকে প্রতিমাসে ক্লায়েন্ট অনুসন্ধানে যেতে হবে না।
এর ফলে আপনার প্রতিমাসে ক্যাশফ্লো (Cashflow) ঠিক থাকবে।
২. টিম তৈরী করা (Build a Team)
আপনাকে একটি টীম তৈরী করতে হবে।
এটি আপনি দুভাবে করতে পারেন।
প্রথমত কোনো ফ্রীলান্সার বা কর্মচারী কে মাস মাইনের ভিত্তিতে নিয়োগ করে।
অথবা কোনো ছাত্র/ছাত্রী কে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ করে।
এবার আসুন দেখা যাক দুটি ব্যাবস্থার সুবিধা অসুবিধা।
যদি আপনি কোনো ফ্রীলান্সার কে মাস মাইনের ভিত্তিতে নিয়োগ করেন।
সুবিধা:
১. ফ্রীলান্সার নিজের কাজ এ বেশ দক্ষ হন। যদি কোনো মার্কেট প্লেস থেকে তাকে নিয়োগ করেন তাহলে আপনি তার রেটিং, রিভিউ, পোর্টফোলিও দেখেই নিয়োগ করবেন।
২. যদি প্রজেক্ট বেসিস এ নিয়োগ করেন তাহলে আপনার প্রজেক্ট না থাকলে তাকে টাকা দিতে হবে না।
অসুবিধা:
১. অনেক সময় দেখা যায় যে ওই সব ফ্রীলান্সাররা সরাসরি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করে আপনার ক্লায়েন্ট ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এটি কোনো কর্মচারী রাখলে সেক্ষেত্রেও হতে পারে।
এবার আসুন আলোচনা করি আপনার কোনো ছাত্র/ছাত্রী কে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগের সুবিধা অসুবিধা।
সুবিধা:
১. আপনি যদি ছাত্র/ছাত্রী পেতে চান তাহলে আপনাকে একটি ইনস্টিটিউট বানাতে হবে, তার প্রচার করতে হবে এবং ধীরে ধীরে আপনার ইনস্টিটিউট এ ছাত্র/ছাত্রীরা আসবে। এতে আপনার লোকালয়ে একটি পরিচিতি গড়ে উঠবে এবং এর থেকে আপনি কোনো লোকাল ক্লায়েন্ট পেতে পারেন।
২. কম হলেও ছাত্র/ছাত্রীদের থেকে কোর্স ফি পাবেন।
৩. সব ছাত্র/ছাত্রীদের আপনার পক্ষে নিজের কাছে নিয়োগ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অনন্যা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে তাদের আপনার ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়োগ করতে বলতে পারেন। এতে আপনার একটি ভালো নেটওয়ার্কিং তৈরী হবে।
৪. যদি ইউটুব এর মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রী পেতে চান তাহলে আপনি ইউটুবে ভিডিও দেবেন এবং এতে আপনার একটি পরিচিতি গড়ে উঠবে এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন পেইড কোর্স আপনি বিক্রয় করতে পারবেন।
৫. যদি আপনার ছাত্র/ছাত্রী আপনার কর্মচারী হয় তাহলে দেখবেন তারা অনেক বিশস্ত (Loyal) হবে। তারা আপনার ক্লায়েন্ট চুরি করার মতো কাজ থেকে বিরত থাকবে।
৬. এরা ফ্রীলান্সার বা কর্মচারীদের থেকে কম টাকা বেতন দাবি করে।
অসুবিধা:
১. যেহেতু এই সব ছাত্র/ছাত্রীরা সবেমাত্র কাজ শিখেছে তাই তাদের কাজে অনেক ভুল হতে পারে। তাই আপনাকে মাথা ঠান্ডা করে এটা মেনে নিয়ে ধৈয ধরে তাদের তৈরী করতে হবে।
২. অনেক সময় এরা তৈরী হয়ে গেলে অন্য বড় প্রতিষ্ঠানে চলে যায় বা নিজেরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে। আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন ১/২ জন পুরোনো ছাত্র/ছাত্রীকে নিজের প্রতিষ্ঠানে রাখতে। এরাই আপনার আসল মূলধন।
যদি ছাত্র/ছাত্রীরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে তবে এদের সাহায্য করুন। মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং একটি ওপেন মার্কেট। যে কেউ এখানে আসতে পারে, আপনি কাউকে আটকাতে পারবেন না।
এবার ধরে নিচ্ছি আপনি নিয়মিত ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পাচ্ছেন এবং আপনি আপনার ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে একটি সুন্দর টীম তৈরী করে ফেলেছেন। এর পর কি করবেন?
৩. দরকারি কাগজ তৈরী করা (Prepare Necessary Documents)
আপনাকে প্রথমেই ট্রেড লাইসেন্স তৈরী করতে হবে। চেষ্টা করবেন ট্রেড লাইসেন্স এ বিজনেস টাইপ ‘এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট’ নেওয়ার। এটি পরে অনেক সুবিধা হবে।
এর পর আপনাকে একটি ‘কারেন্ট ব্যাঙ্ক একাউন্ট’ বানাতে হবে।
এ ছাড়াও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি সময় মতো দাখিল করতে হবে।
৪. ব্যবসা বাড়িয়ে তোলা (Scale the Business)
আপনি মনে করুন ভিডিও এডিটিং করেন।
আপনার নির্দিষ্ট কিছু ক্লায়েন্ট আছে। আপনার একটি টীম আছে।
এবার যে সব ক্লায়েন্টদের ভিডিও এডিট করছেন তাদের বলুন আপনি ইউটুবে ভিডিও ম্যানেজমেন্ট করবেন এবং তার জন্য একটি প্যাকেজ বানান এবং ক্লায়েন্টদের প্যাকেজটি নিতে বলুন।
এর সাথে আপনি অন্য স্কিল গুলো শেখার চেষ্টা করুন।
যেমন আপনি ইউটুবে ভিডিও এডিটিং করেন এর সাথে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসিটি শিখুন এবং কাজ যোগাড় করুন।
এর পর আপনি নতুন স্কিলটির জন্য কিছু ক্লায়েন্ট যোগাড় করুন এবং দরকার হলে কোনো স্টাফ বা ফ্রীলান্সার কে নিয়োগ করুন।
আরো পড়ুন: কিভাবে মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকে ক্লায়েন্ট পাবেন
পারলে ছাত্র/ছাত্রীদের এই নতুন স্কিলটি সেখান।
এর সাথে পুরোনো, নতুন দুটো স্কিল এর ভিত্তিতে কাজ যোগাড় করুন।
৫. ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী: বিজ্ঞাপনে খরচ করুন (Spent on Ads)
যখন মোটামুটি আপনার এজেন্সী দাঁড়িয়ে গেছে তখন বিজ্ঞাপনে ব্যায় করুন।
লোকাল মার্কেটে কোর্স এর জন্য বিজ্ঞাপন দিন।
বিদেশে গুগল এড, ফেসবুক এড এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিন কাজ পাওয়ার জন্য।
এজেন্সির মধ্যে মার্কেটিং টীম, প্রোডাকশন টীম, ম্যানেজমেন্ট টীম গড়ে তুলুন।
এজেন্সির মোট আয়ের অন্তত ২০% বিজ্ঞাপনে খরচ করুন।
তবে সব সময় আপনার যারা পুরোনো ছাত্র/ছাত্রী, কর্মচারী হিসেবে আপনার সাথে কাজ করছে তাদের বেশি গুরুত্ব দেবেন।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী তৈরী করতে কতদিন লাগে?
এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বলা যাবে না। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার ওপর।
কোন বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী তৈরী করার জন্য?
নিয়মিত কাজ পাওয়া।
কোনটি ভালো, ফ্রীলান্সার নিয়োগ না ছাত্র/ছাত্রী কে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ?
অবশ্যই ছাত্র/ছাত্রী কে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ।
উপসংহার:
ওপরে যে বিষয় গুলো নিয়ে আলোকপাত করলাম সেগুলো ১-২ দিনের ব্যাপার না।
বছরের পর বছর অনেক পরিশ্রম করলে তবেই একজন ফ্রিল্যান্সিং থেকে এজেন্সী (Freelancer to Agency Owner) ওনার হতে পারে।
ওপরের আর্টিকেল টি পড়ে আপনার কেমন লাগলো অবশই কমেন্ট করে জানান।
ধন্যবাদ।
আমার নাম অরিন্দম ঘোষ। আমি এই ওয়েবসাইট এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশায় আমি একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনার এবং ব্লগিং আমার প্যাশন। আমি এই সাইট এ ব্লগিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, আর্ন মানি অনলাইন বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। এই সাইট এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাতে কোয়ালিটি কনটেন্ট প্রকাশ করা যা সাইট এর ভিসিটার দের কাজে লাগে।