ড্রপ-সার্ভিসিং কি? ড্রপ-সার্ভিসিং করে কি করে আয় করবো?

ড্রপ-সার্ভিসিং শব্দটার সাথে আপনারা অল্পবিস্তর নিশ্চয় পরিচিত। এই আর্টিকলে আজ আমি আলোচনা করবো ড্রপ-সার্ভিসিং কি? কি ভাবে ড্রপ-সার্ভিসিং করে আপনি অনেক টাকা আয় করতে পারবেন?

শুরু করার আগে প্রথমেই বলে দিই যে ড্রপ-সার্ভিসিং এবং ড্রপ-শিপিং কিন্তু এক নয়। 

ড্রপ-শিপিং হল অন্য কোনো লোকের পণ্য বিক্রয় করা এবং তার বদলে একটি কমিশন পাওয়া। মনে রাখতে হবে ড্রপ-শিপিং এবং এফিলিয়েট মার্কেটিং কিন্তু এক জিনিস নয়। 

আপনারা যারা এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে আরো জানতে চান তারা এই আর্টিকেল টি পড়তে পারেন : কি ভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করবো।

যাই হোক এবার আসল বিষয় আসা যাক। 

ড্রপ-সার্ভিসিং কি (What is Drop Servicing)?

আপনি যদি কারুর কাজ অন্য কারুকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে টাকা আয় করেন তাহলে তাকে বলবো ড্রপ-সার্ভিসিং।

বিষয়টি আর একটু পরিষ্কার করে বলছি। 

ধরুন x নামে একটি ব্যাক্তি একটি ওয়েবসাইট বানাতে চান। এবার আপনি গিয়ে x কে বললেন যে আমি ওয়েবসাইটটি বানিয়ে দেব তার বদলে আমায় $৫০০ দিতে হবে। 

এবার আপনি এমন কাউকে খুঁজে বার করলেন যে ওয়েবসাইট বানায় এবং তার জন্য সে $১০০ চার্জ করে। 

আপনি তাকে দিয়ে ওয়েবসাইট বানিয়ে নিলেন এবং আপনি $৪০০ ($৫০০ – $১০০) আয় করলেন। 

শুনে মনে হচ্ছে বিষয়টি খুব সহজ , তাই না ?

আসলে বিষয়টি ততটা সহজ নয় যতটা মনে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক গুলো ব্যাপার আছে। আমি ধীরে ধীরে সেগুলো বলছি। 

প্রথমে হচ্ছে ড্রপ-সার্ভিসিং কি করে শুরু করবো?

এর জন্য প্রথমেই আপনাকে অনলাইন জগতে একটা উপস্থিতি গড়ে তুলতে হবে। 

যাতে Google সার্চ করলে আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রথমে ঠিক করুন আপনি কোন বিষয় নিয়ে ড্রপ-সার্ভিসিং করবেন?

ধরুন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ড্রপ-সার্ভিসিং করবেন। এখন ডিজিটাল মার্কেটিং একটি বিশাল বড় ক্ষেত্র। 

ধরে নিন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে ড্রপ-সার্ভিসিং করবেন ভাবলেন। 

সেই জন্য আপনি নিজের একটি ব্র্যান্ড বানালেন এবং সেখানে সোশ্যাল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ওপর কনটেন্ট দিতে থাকলেন। 

এর জন্য আপনাকে কি কি বানাতে হবে ?

প্রথমেই দরকার একটি ওয়েবসাইট। যেখানে আপনার সম্বন্ধে সব তর্থ্য থাকবে। 

আমি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানানোর কথা বলছি।

তার পর থাকবে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল। ধরুন একটি ফেসবুক পেজ, প্রোফেশনাল ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট, লিঙ্কেডিন একাউন্ট , ইউটুব একাউন্ট ইত্যাদি। 

এর মাধ্যমে সহজে আপনাকে খুঁজে পাওয়া যাবে এবং আপনি যে কাজটি জানেন সেটা সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন। 

ওয়েবসাইট যদি নিজে বানাতে না পারেন তাহলে Fiverr বা Upwork থেকে কোনো ভালো ফ্রীলান্সার দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। 

মনে রাখবেন এখন সেলফ ব্র্যান্ডিং খুব চলছে। তাই অন্য কোনো ডোমেইন নাম না নিয়ে নিজের নামে ডোমেইন কিনুন। যেমন ধরুন ডিজিটাল-আপনার নাম বা ফ্রীল্যানসিং আপনার নাম। 

এর পর নিজের সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল গুলো তৈরী করুন। ইউটুব এ অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন যে গুলো দেখে ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট বানাতে পারবেন। 

এরপর পারলে প্রতিদিন কনটেন্ট পোস্ট করুন। 

কি ভাবে করবেন?

যেহেতু আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন তাই খেয়াল করুন যে অন্যরা কে কি কনটেন্ট পোস্ট করছেন। 

তাদের থেকে কনটেন্ট আইডিয়া নিয়ে Canva বা Photoshop কনটেন্ট বানিয়ে প্রতিদিন পোস্ট করুন। 

যদি আপনি শুধুমাত্র USA থেকে কাজ পেতে চান তাহলে অবশই Instagram এবং Linkedin প্রতিদিন কনটেন্ট পোস্ট করুন। 

এতে কি হবে?

প্রথমত আপনাকে অনলাইন দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে এবং আপনার একটা গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হবে। 

আমার মনে হয় মোটামুটি ১ মাস আপনি নিজের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর কাজ করুন। তাহলে অনলাইন জগতে একটা ভালো ব্র্যান্ডিং গড়ে উঠবে এবং এই কাজ গুলো করে যেতে হবে।

এরপর হোলো 

কিভাবে ক্লায়েন্ট পাবে বা কি ভাবে কাজ যোগাড় করবো (How to get clients for Drop Servicing)?

আপনি ৪ ভাবে ক্লায়েন্ট জোগাড় করতে পারেন ড্রপ-সার্ভিসিং এর জন্য। 

১. ফেসবুক গ্রুপ থেকে:

ধরুন আপনি যদি Florida থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ক্লায়েন্ট পেতে চান তাহলে ফেসবুক Florida র যে বিজনেস গ্রুপ গুলো আছে সেখানে যোগ দিন এবং আপনার বিষয়ের ওপর কনটেন্ট দিতে থাকুন। 

এর পর ওই সব গ্রুপ এ যে সব বিজনেস ওণার বা ব্যাবসার মালিকরা আছেন তাদের মেসেজ করুন বা তাদের ইমেইল ID নিয়ে তাদের মেইল করুন। কি ভাবে ইমেইল করবেন সে ব্যাপারে আমি পরে বলছি। 

যখন পোস্ট করবেন বা মেসেজ করবেন তখন তাদের নিজের সার্ভিস নিতে প্রথমেই বলবেন না। 

তাদের বলুন যে তারা কি ভাবে নিজের ব্যবসা অনলাইনে বাড়াবে, কি ভাবে ব্যবসা অনলাইনে প্রচার করবে, তাদের ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট এ কি কি ভুল আছে বলে আপনি মনে করেন ইত্যাদি। 

এর পর তারা যদি আগ্রহী হন তবে তাদের সাথে ভিডিও কল বা চ্যাট করে তাদের সাহায্য করার সাথে সাথে আপনার সার্ভিসটি নিতে বলুন তাদের। 

ভিডিও কল বা চ্যাটের জন্য Zoom বা Google Meet ব্যবহার করতে পারেন। 

২. লিঙ্কডিন থেকে :

যদি আপনি সত্যি USA  থেকে ভালো ক্লায়েন্ট পেতে চান তাহলে অবশই লিঙ্কডিন এ সক্রিয় হন। 

নিজের লিঙ্কডিন প্রোফাইল টিকে ভালো করে অপটিমাইজড করে নিন। 

প্রতিদিন ভালো কনটেন্ট বিভিন্ন আকারে প্রকাশ করুন। 

এর পর লিঙ্কডিন সিইও, ওনার ইত্যাদিদের খুঁজে বার করে তাদের মেসেজ করুন। 

কিন্তু এক্ষেত্রে আমি বলবো একটা ভালো Niche ধরে এগোন। 

যেমন California তে যে সব Dentist বা দাঁতের ডাক্তাররা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।   

এখন প্রশ্ন হলো লিঙ্কডিন ক্লায়েন্ট দের কি ভাবে মেসেজ করবেন ?

নিচে একটা মেসেজ স্ক্রিপ্ট দিলাম। এটি কিছু পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন।

ড্রপ-সার্ভিসিং কি? ড্রপ-সার্ভিসিং করে কি করে আয় করবো?

পুরোপুরি এটা ধরে কপি পেস্ট করে দেবেন না। যে লেখা গুলো সেকেন্ড ব্রাকেটের মধ্যে আছে সে গুলো অবশই পাল্টে নিজের বিষয় গুলো দিন। 

এই বিষয় আরো জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পরনে : Link

৩. কোল্ড ইমেইল করে :

প্রথমেই যে কোনো একটা Niche বা বিষয় ঠিক করুন। 

যেমন ধরুন Dentist in California .

এর পর গুগল সার্চ থেকে তাদের ডেটা কালেক্ট করুন। 

সেটি একটা এক্সেল ফাইল এ রাখুন।

নিচে একটি এক্সেলশিট ছবি দিলাম বোঝার সুবিধার জন্য। আপনারা Google sheet ব্যবহার করতে পারেন।

ড্রপ-সার্ভিসিং কি? ড্রপ-সার্ভিসিং করে কি করে আয় করবো?

 এবার তাদের ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল একাউন্ট এ কি কি ভুল বা খামতি আছে খুঁজে বার করুন। 

এর পর তাদের ইমেইল করুন। 

নিচে একটা কোল্ড ইমেইল স্ক্রিপ্ট দিলাম। অবশই একটু পরিবর্তন করে ব্যবহার করতে পারেন।  

ড্রপ-সার্ভিসিং কি? ড্রপ-সার্ভিসিং করে কি করে আয় করবো?

এর পর কয়েক দিন পর তাদের ফলোআপ ইমেইল করুন। 

৪. ইনস্টাগ্রাম থেকে ক্লায়েন্ট পাওয়া:

প্রথেমই আপনাকে ইনস্টাগ্রাম এ একটিভ থাকতে হবে। 

মানে আপনাকে বিজনেস প্রোফাইল বানাতে হবে , প্রোফাইলটি অপটিমাইজড করতে হবে, প্রতিদিন পোস্ট করতে হবে। 

এর পর লিঙ্কডিন এর মতোই আপনাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় ধরে তার ওপর যত প্রোফাইল আছে তাদের কে  DM করতে হবে। 

তারা যে পোস্ট গুলো করছে সে গুলো লাইক করতে হবে। সেখানে কিছু ভালো ভালো কমেন্ট করতে হবে। 

এই ভাবে তাদের সাথে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। 

পরিশেষে নিজের সার্ভিসটি তাদের অফার করতে হবে। 

মনে রাখবেন কেউ কিন্তু কোনো অপরিচিত লোকের কাছ থেকে কোনো দামি জিনিস কেনেন না।  

ফ্রীল্যান্সার খুঁজে বার করা (Find Freelancer) :

এর পর তৃতীয় পদক্ষেপ হলো ভালো ফ্রীল্যান্সার খুঁজে বার করা। 

এর জন্য আপনারা ফাইভার বা আপওয়ার্ক এর সাহায্য নিতে পারেন। 

এমন ফ্রীল্যান্সার খুঁজে বার করুন যাদের ভালো রিভিউ বা রেটিং আছে। 

এর পর কোনো কাজ এলে তাদের দিয়ে করিয়ে নিন। 

এ বিষয় আরো জানতে অবশই পড়তে পারেন : আপওয়ার্ক ফাইভার ছাড়া ক্লায়েন্ট কি করে পাবো

কিন্তু সব থেকে ভালো হচ্ছে যদি নিজের বন্ধু বা ছাত্রদের নিয়ে একটি ফ্রীল্যানসিং গ্রুপ বানিয়ে তুলুন।

ড্রপ-সার্ভিসিং শুরু করার আগে যে যে বিষয় গুলো মনে রাখতে হবে :

১. প্রথমেই নিজেকে ইংলিশ ভাষায় সাবলীল করে গড়ে তুলুন। 

২. যে বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান তার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। 

৩. ক্লায়েন্টদের সম্বন্ধে ভালো করে রিসার্চ করে তবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। 

৪. প্রথমেই তাদের নিজের সার্ভিস নিতে বলবেন না। 

৫. ফ্রীল্যান্সারদের কখনোই ক্লায়েন্টের নাম, ইমেইল, ফোন নম্বর, এড্রেস দেবেন না। 

৬. কোনো অ্যাডভান্স বা অগ্রিম ছাড়া কাজ শুরু করবেন না। 

৭. যদি কোনো ক্লায়েন্ট বলে চেকে টাকা দেবে বা তাদের থেকে গিয়ে টাকা আন্তে হবে তাহলে তাদের সাথে আর যোগাযোগ করবেন না। 

৮. কোনো ক্লায়েন্ট যদি কোনো কাউশন ডিপোজিট (Caution Deposit) চায় তাহলে দেবেন না। 

৯. প্রতিদিন লিঙ্কডিন , ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করুন। 

১০. দিনে অন্তত ১০ টা করে কোল্ড ইমেইল করুন। 

১১. প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ইমেইল করবেন। একই ইমেইল সবাই কে পাঠিয়ে দেবেন না। 

১২. ক্লায়েন্ট যোগাড় করাই হচ্ছে আসল কাজ। 

পরিশেষে বলি ড্রপসার্ভিসিং করে ভালো টাকা আয় করা যায় ঠিকই। কিন্তু এটা ভালো ভাবে করতে সময় লাগে। এটা কোনো তাড়াতাড়ি বড়লোক হবার উপায় (Quick Rich Scheme) নয়। তাই আপনাকে ধৈয্য ধরে লেগে থাকতে হবে, নিজেকে আরো উন্নত করে গড়ে তুলতে হবে।

দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় পড়াশুনো করার জন্য অবশই রাখবেন।

আশা করি সামনের বছর আপনি প্রচুর ডলার রোজগার করবেন।

আর্টিকেল টি পড়ে কেমন লাগলো অবশই কমেন্ট করে বলবেন।

সামনের বছর খুব ভালো কাটুগ।

শুভ নববর্ষ।  

Leave a Comment