বর্তমানে মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রতিযোগিতা ভীষণ ভাবে বেড়ে গেছে। তাই মার্কেট প্লেসের থেকে ক্লায়েন্ট পাওয়া বিশেষ করে ওয়েব ডিসাইন ক্লায়েন্ট পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ এই আর্টিকলে আমি আলোচনা করবো কি করে মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকে ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পাওয়া যাবে। মনে রাখবেন ওয়েব ডিজাইন নিয়ে যারা সবে কাজ শুরু করেছেন এই আর্টিকেলটি মুলত তাদের জন্য।
Table of Contents
১. ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পাওয়ার উপায় – স্কিল বা দক্ষতা তৈরী করুন:

অনলাইন জগতে রোজগার করতে হলে প্রথমেই দরকার একটি স্কিল বা দক্ষতা গড়ে তোলা। যদি ওয়েবসাইট ডিজাইন নিয়ে এগোতে চান তাহলে ভালো করে ওয়েবসাইট বানানো শিখুন। এর জন্য ভালো ডিজাইন জানার পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেসএর ওপর দক্ষতা গড়ে তুলুন। এর জন্য যে যে বিষয় গুলো আপনাকে ভালো করে শিখতে হবে সেগুলো হলো:
- ফিগমা
- এডোবি ক্সডি
- ওয়ার্ডপ্রেস
- এলিমেন্টর
- ডিভি
- শপিফাই
- উইক্স
- স্কয়ারে স্পেস
- ওয়েব ফ্লো
এগুলো শেখা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই অন্তত এলিমেন্টর পর্যন্ত ভালো করে শিখে কাজ যোগাড় করার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুন: ইউটিউব থেকে ফ্রিল্যান্সিং শেখা সম্ভব?
২. বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুন:
যদি আপনি একদম নতুন হন তাহলে ওপরের স্কিল গুলো তো নয় ইউটুবে থেকে বা Udemy থেকে কোর্স করে শিখতে পারেন। তার পর আপনাকে চেষ্টা করতে হবে বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার জন্য।
এটি আপনি দুভাবে করতে পারেন।
১. নিজের একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট বানিয়ে।
২. কোনো কোম্পানি বা ফ্রীলান্সার এর অধীনে কাজ করে।
৩. ফ্রীল্যান্সিন ওয়েবসাইট এ একাউন্ট খুলুন:
আপওয়ার্ক, ফিভারের মতো মার্কেট প্লেস এ একাউন্ট খুলে ফেলুন। এতে আপনি ক্লায়েন্টরা কি চায় বা মার্কেট প্লেস এ কোন ধরণের কাজের ডিমান্ড আছে বুঝতে পারবেন। তার সাথে আপনার একটি অনলাইন পরিচিতি গড়ে উঠবে।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে সক্রিয় হন:
মার্কেটপ্লেসের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলোতে নিজের প্রোফাইল খুলে সেখানে নিয়মিত কনটেন্ট দেওয়া শুরু করুন। এক্ষেত্রে লিঙ্কেডিন, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এ সব থেকে বেশি সক্রিয় থাকুন।
৫. একটি নিচ নির্বাচন করুন:

ওপরের কাজ গুলো যদি আপনি ভালো ভাবে করে উঠতে পারেন এবং ওয়েবসাইট বানানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন তাহলে একটি নিচ্ খুঁজে বার করুন।
এটি অবশই ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পেতে অনেক সাহায্য করবে।
বিষয়টি আমি বিস্তারিত ভাবে বলছি।
মনে করুন আপনি একজন ওয়েব ডিসাইনার এবং আপনি সকলের জন্য ওয়েবসাইট বানান।
এক্ষেত্রে আপনি তাল মেলাতে পারবেন না।
তার চেয়ে আপনি যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট ইন্ডাস্ট্রির জন্য ওয়েবসাইট বানান তাহলে ভালো হয়।
যেমন ধরুন আপনি শুধু ডিজিটাল কোচ দের জন্য ওয়েবসাইট বানান।
বা ধরুন আপনি শুধু ফিন টেক কোম্পানি দের জন্য ওয়েবসাইট বানান।
একবার যদি এই বিষয় আপনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন তাহলে যেখানে যত ডিজিটাল কোচ আছে তারা আপনার ক্লায়েন্ট।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই নিচ আমরা কি করে ঠিক করবো? এখন সেটা নিয়ে আলোচনা করবো :
১. প্রথমেই আপওয়ার্ক এ যান এবং দেখুন ওখানকার ক্লায়েন্টরা কি চাইছে।
কোন ইন্ডাস্ট্রি এর লোকেরা কি সার্ভিস চাইছে।
এবার শেষ ১ মাসের ডাটা কালেক্ট করুন যে কারা কি সার্ভিস চাইছে এবং তারা কোন দেশের নাগরিক।
একটি এক্সেল ফাইল বা গুগল শিট এ এগুলো লিখে রাখুন।
২. এর পর লিঙ্কেডিন এবং ইনস্টাগ্রাম এ যান।
ভালো করে দেখুন যারা ওয়েব ডিসাইন নিয়ে কাজ করছে এবং অনেকটা এগিয়ে গেছে তারা সম্প্রতি কি কি কাজ করেছে।
তাদের ক্লায়েন্ট কারা।
৩. এমন কোনো ওয়েব ডিসাইন নিচ নির্বাচন করবেন না যেটা সারা বছর চলে না। যেমন এমন কোনো ব্যাবসার ওয়েবসাইট বানাবেন না যারা শুধু মাত্র শীতকালে কাজ করে।
৪. যে নিচ গুলো নতুন যেমন ধরুন ফিনটেক এদের সাথে কাজ করতে পারেন।
৫. আপনি যদি একা কাজ করেন এবং ওয়েবসাইট বিল্ডার দিয়ে ওয়েবসাইট বানান তাহলে তুলনামূলক সহজ নিচ নির্বাচন করুন।
৬. এক্ষেত্রে এসইও র নিচ সিলেকশন ভিডিও গুলো বা এফিলিয়েট মার্কেটিং এর নিচ সিলেকশন প্রসেস বা ভিডিও গুলো দেখতে পারেন।
৭. বিদেশের কাজ ধরার পাশাপাশি নিজের দেশে কাজ ধরার চেষ্টা করুন। কম টাকা হলেও এগোলো পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ।
৮. মনে রাখবেন নিচ নির্বাচন করা একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ধৈয্য ধরে অনেক রিসার্চ ও পড়াশুনো করতে হবে।
৯. গুগল ট্রেন্ডস এর সাহায্য নিতে পারেন নিচ রিসার্চ করার জন্য।
৬. ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করুন:
ধরে নিলাম আপনি একটি নিচ ঠিক করেছেন।
এর পর খুঁজে বার করুন আপনার ক্লায়েন্ট কারা।
কোনো একটি নিচ নিয়ে গুগল ট্রেন্ডস এ সার্চ করুন শেষ ১ মাস।
এর পর আমেরিকার যে রাজ্যে ওই সার্ভিস বেশি চলছে সেখান থেকে শুরু করতে পারেন।
ধরে নিলাম ‘নিউ ইয়র্ক’ এ আপনি যে নিচ রিসার্চ করেছেন সেটি বেশি জনপ্রিয়।
এবার গুগল মাই বিজনেস থেকে ওই নিচ এ যাদের ওয়েবসাইট নেই তাদের খুঁজে বার করে তাদের সব তর্থ্য গুগল শিট বা এক্সেল ফাইল এ লিখুন।
যেমন ধরুন:
১. ব্যাবসার নাম
২. ইমেইল
৩. ফেসবুক পেজ এর লিঙ্ক
৪. ইনস্টাগ্রাম পেজ এর লিঙ্ক
৫. লিঙ্কডিন প্রোফাইল লিঙ্ক
এর পর আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করুন।
প্রথমে দেখুন তারা কোন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম এ বেশি সক্রিয়।
মনে করুন তারা ফেসবুক এ বেশি সক্রিয়।
তাহলে তাদের সাথে ফেসবুক মেসেজ এর মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করুন। অবশই প্রথমেই তাদের সার্ভিসের কথা বলবেন না।
প্রথমে তাদের সাথে পরিচিত হন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। অনেক পরে নিজের সার্ভিসটি নিতে বলবেন।
যদি তারা সোশ্যাল মিডিয়াতে একটিভ না হয় তাহলে তাদের ইমেইল করুন।
এটি অবশই ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পেতে অনেক সাহায্য করবে।
ইমেইল করার জন্য কয়েকটা বিষয় মনে রাখবেন:
১. ইমেইল অবশই কোম্পানি ইমেইল বা ওয়েব ইমেইল থেকে করুন। যেমন ধরুন: ইনফো@আপনার কোম্পানি বা প্রোফাইল নাম ডট কম
২. ইমেইল ট্র্যাকার নামে ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবহার করেন। তাহলে ইমেইলটি পড়েছে কিনা, কতবার পড়েছে বা কখন পড়েছে ইত্যাদি জানতে পারবেন।
৩. ইমেইল এ অবশই একটি ভালো সাবজেক্ট লাইন লিখুন। দরকারে চ্যাট জি পি টি র সাহায্য নিন।
৪. প্রথমে তাদের ওয়েবসাইট বানানোর সুবিধা নিয়ে বলে তার পর নিজের সার্ভিস টি নিয়ে বলুন।
৫. ইমেইলটি বেশি দীর্ঘ করবেন না।
৬. দরকারে লুম দিয়ে একটি ভিডিও বানিয়ে ইমেইল এর সাথে পাঠিয়ে দিন।
একটি কথা মনে রাখবেন সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা বলা বা ইমেইল করা মানেই কিন্তু কাজ পাওয়া নয়।
আপনি যদি ভালো ভাবে নিচ রিসার্চ করেন, ক্লায়েন্ট রিসার্চ করেন তবেই ক্লায়েন্ট পেতে পারেন।
তাই অনেক ধৈয নিয়ে কাজ করুন এবং জেনে রাখুন ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনই না বলতে পারে।
তাই তাড়াতাড়ি হতাশ হয়ে পড়বেন না।
এটা তো গেলো যাদের ওয়েবসাইট নেই তাদের রিচ আউট করা।
এবার যাদের ওয়েবসাইট আছে এবং আপনি তাদের ওয়েবসাইট রিডিসাইন করতে চান তাদের সম্পর্কে বলি।
ওয়েবসাইট থাকলেই যে রিডিসাইন করাতে চাইবে এমন কোনো কথা নেই।
তাই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে তাদের ওয়েবসাইট এ কি কি খামতি বা ত্রুটি আছে।
সেগুলো খুব ভালো করে বিশ্লেষণ করে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৭. নিয়মিত কাজ পাওয়া:
ওয়েবসাইট ডিসাইন নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের অন্যতম অসুবিধা হলো নিয়মিত কাজ পাওয়া।
কারণ একজন ওয়েবসাইট বানিয়ে নিয়ে গেলে সে তো আর পরের মাসে কাজ দেবে না।
সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন?
এক্ষেত্রে আপনি আমেরিকায় বা বাইরের দেশে যে সব এজেন্সী আছে তাদের ‘হোয়াট লেভেল সার্ভিস’ অফার করতে পারেন।
হোয়াট লেভেল সার্ভিস কি?
আপনি বাইরের দেশে যে সব ওয়েব ডিসাইন, লিড জেনারেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সী আছে তাদের একটি লিস্ট বানিয়ে ফেলুন।
তার পর তাদের ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলুন যে আপনি তাদের হয়ে কাজ করে দেবেন, তাদের ডোমেইন এ, তাদের কোম্পানি ওয়েবসাইট এর মাধমে।
সেখানে কোথাও আপনার নাম থাকবে না।
পুরোটাই তাদের নাম এ হবে আপনি শুধু বানিয়ে দেবেন এবং টাকা নেবেন।
এতে তাদের কাজ নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা থাকবে না এবং তাদের খরচ অনেক কম হবে।
এরকম ভাবে যদি ২/৩ এজেন্সীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন তাহলে মাসে মাসে ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট খোঁজার ঝামেলা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
৮. বিজ্ঞাপন দিয়ে কাজ পাওয়া:
আপনি যদি গুগল বা ফেসবুক ওয়েবসাইট ডিসাইন নিয়ে বিজ্ঞাপন দেন তাহলে অনেক প্রজেক্ট পাবেন।
এটি অবশই ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট পেতে অনেক সাহায্য করবে।
কিন্তু এগুলো বেশির ভাগ আপনার নিজের দেশের কাজ।
কারণ বিদেশে এড চালানোর খরচ অনেক বেশি।
তাই আমার মনে হয় ওয়েবসাইট ডিসাইন শেখার পর আপনার ব্যবসা যখন একটু দাঁড়িয়ে যাবে আপনি গুগল এড এবং ফেসবুক এড শিখে নিতে পারেন।
এতে কাজ জোগাড় করতে পারবেন পাশাপাশি আপনি আপনার ক্লায়েন্টদের ওই অতিরিক্ত সার্ভিসটি প্রদান করতে পারবেন।
কিছু গুরুতূপূর্ণ পরামর্শ:
১. আপনি যদি বাড়ির একমাত্র রোজগেরে হন তাহলে ফ্রীল্যানসিং কে জীবিকা হিসেবে নেওয়ার আগে ভালো করে ভেবে দেখবেন।
২. আপনি কোনো বড় কোম্পানিতে চাকরি করার পাশাপাশি ওয়েব ডিসাইন নিয়ে ফ্রীল্যানসিং করতে পারেন।
৩. ওয়েব ডিসাইন শেখার পাশাপাশি ইংলিশ কমিউনিকেশন, সেলস, ক্লোসিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ও শিখতে হবে ব্যবসাকে সফল করার জন্য।
৪. পাহাড় প্রমান ধৈয্য রাখতে হবে।
আশা করি এই আর্টিকেল টি পড়ে ওয়েব ডিজাইন ক্লায়েন্ট কি ভাবে পাবেন সে ব্যাপারে একটি ধারণা পেলেন। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ।
আমার নাম অরিন্দম ঘোষ। আমি এই ওয়েবসাইট এর প্রতিষ্ঠাতা। পেশায় আমি একজন ওয়েবসাইট ডিজাইনার এবং ব্লগিং আমার প্যাশন। আমি এই সাইট এ ব্লগিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, আর্ন মানি অনলাইন বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। এই সাইট এর মূল লক্ষ্য হলো বাংলাতে কোয়ালিটি কনটেন্ট প্রকাশ করা যা সাইট এর ভিসিটার দের কাজে লাগে।